রাসুল (সঃ) এর নবুয়াতী জীবনের সকল কথা, কাজ এবং অনুমোদনকে হাদীস বলে। মূল বক্তব্য হিসাবে হাদীস তিন প্রকার -
.
১) কাওলী হাদীস : রাসুল (সঃ) এর পবিত্র মুখের বানীই কাওলী হাদীস।
২) ফিলী হাদীস: যে কাজ রাসূল (সঃ) স্বয়ং করেছেন এবং সাহাবীগণ তা বর্ণনা করেছেন তাই ফিলী হাদীস।
৩) তাকরীরী হাদীসঃ সাহাবীদের যে সব কথাও কাজের প্রতি রাসূল (সঃ) সমর্থন প্রদান করেছেন তাহাই তাকরীরী হাদীস।
.
রাবীদের সংখ্যা হিসেবে হাদীস তিন প্রকারঃ
.
১। খবরে মুতাওয়াতির: যে হাদীস এত অধিক সংখ্যক রাবী বর্ণনা করেছেন যাদেও মিথ্যার উপর একমত হওয়া অসম্ভব।
২। খবরে মাশহুর: প্রত্যেক যুগে অন্তত: তিনজন রাবী রেওয়ায়েত করেছেন,তাকে খবরে মাশহুর বলে, তাকে মুস্তাফিজ ও বলে।
৩। খবরে ওয়াহেদ বা খবরে আহাদ: হাদীস গরীব আজিজ এবং খবরে মাশহুর এ তিন প্রকারের হাদীদকে একত্রে খবরে আহাদ বলে, প্রত্যেকটিকে পৃথক পৃথকভাবে খবরে ওয়াহিদ বলে।
.
#আযীয হাদীসঃ যে হাদীস প্রত্যেক যুগে অন্তত: দুজন রাবী রেওয়ায়েত করেছেন, তাকে আযীয হাদীস বলে।
#গরীব হাদীসঃ যে হাদীস কোন যুগে মাত্র একজন রাবী বর্ণনা করেছেন। তাকে গরীব হাদীস বলে।
.
রাবীদের সিলসিলা হিসেবে হাদীস তিন প্রকারঃ
১। মারফু হাদীসঃ যে হাদীসের সনদ রাসুল(সঃ) পর্যন্ত পৌছাইয়াছে তাকে মারফু হাদীস বলে।
২। মাওকুফ হাদীসঃ যে হাদীসের সনদ সাহাবী পর্যন্ত পৌছাইয়াছে তাকে মাওকুফ হাদীস বলে।
৩। মাকতু হাদীসঃ যে হাদীসের সনদ তাবেয়ী পর্যন্ত পৌছাইয়াছে তাকে মাকতু হাদীস বলে।
.
রাবী বাদ পড়া হিসাবে হাদীস দুই প্রকার।
১। মুত্তাছিল হাদীসঃ যে হাদীসের সনদের ধারাবাহিকতা সর্বস্তরে ঠিক রয়েছে কোথা ও কোন রাবী বাদ পড়ে না তাকে মুক্তাছিল হাদীস বলে।
২। মুনকাতে হাদীসঃ যে হাদীসের সনদের মধ্যে কোন রাবীর নাম বাদ পড়েছে তাকে মুনকাতে হাদীস বলে।
.
মুনকাতে হাদীস তিন প্রকারঃ
১। মুরসাল হাদীস: যে হাদীসে রাবীর নাম বাদ পড়া শেষের দিকে অথাৎ সাহাবীর নামই বাদ পড়েছে তাকে মুরসাল হাদীস বলে।
২। মুয়াল্লাক হাদীস: যে হাদীসের সনদের প্রথম দিকে রাবীর নাম বাদ পড়েছে অথার্ৎ সাহাবীর পর তাবেয়ী তাবে তাবেয়ীর নাম বাদ পড়েছে তাকে মুয়াল্লাক হাদীস বলে।
৩। মুদাল হাদীস: যে হাদীসে দুই বা ততোধীক রাবী ক্রমান্বয়ে সনদ থেকে বিলুপ্ত হয় তাকে মুদাল হাদীস বলে।
.
বিশ্বস্ততা হিসেবে হাদীস তিন প্রকারঃ
১। সহীহ হাদীসঃ যে হাদীসের বর্ণনাকারীদের বর্ণনার ধারাবাহিকতা রয়েছে, সনদের প্রতিটি স্তরে বর্ণনাকারীর নাম, বর্ণানাকারীর বিশ্বস্ততা, আস্তাভাজন, স্বরণশক্তি অত্যন্ত প্রখর কোনস্তরে তাদের সংখ্যা একজন হয়নি তাকে সহীহ হাদীস বলে।
২। হাসান হাদীসঃ সহীহ সবগুনই রয়েছে, তবে তাদের স্বরণ শক্তির যদি কিছুটা দুর্বলতা প্রমাণিত হয় তাকে হাসান হাদীস বলে।
৩। যায়ীফ হাদীসঃ হাসান, সহীহ হাদীসের গুন সমুহ যে হাদীসে পাওয়া না যায় তাকে যায়ীফ হাদীস বলে।
.
#হাদীসে কুদসীঃ "যে হাদীসের মুল বক্তব্য আল্লাহ সরাসরি রাসূল (সঃ) কে ইলহাম বা স্বপ্ন যোগে জানিয়ে দিয়েছেন, রাসূল (সঃ) নিজ ভাষায় তা বর্ণনা করেছেন তাকে হাদীসে কুদসী বলে।"
#মুদাল্লাছ হাদীসঃ "যে হাদীসের সনদের দোষ ক্রটি গোপন করা হয় তাকে মুদাল্লাছ হাদীস বলে।"
সুনানঃ হাদীসের ঐ কিতাবকে সুনান বলা হয় যা ফিক্হ এর তারতীব অনুয়াযী সাজানো হয়েছে।
.
#সুনানে_আরবায়াঃ (আবুদাউদ শরীফ+ নাসায়ী শরীফ+তিরমীযী শরীফ+ ইবনে মাজায় শরীফ) এই চার হাদীস গ্রন্থকে এক সাথে সুনানে আরবায়া বলা হয়।
.
#মুসনাদঃ হাদীসের ঐ কিতাবকে বলা হয় যা সাহাবায়ে কিরামের তারতীব অনুয়াযী লিখা হয়েছে।
.
#সহীহাইনঃ বুখারী শরীফ ও মুসলীম শরীফকে এক সাথে সহীহাইন বলা হয়।
মুত্তাফাকুন আলাইহি: ইমাম বুখারী (রহঃ) ইমাম মুসলিম (রহঃ) উভয়ে একই সাহাবী হতে যে হাদীস স্ব-স্ব প্রান্তে সংকল করেছেন তাকে মুত্তাফাকুন আল্লাইহি বলে।
#জামেঃ যে গ্রন্থে হাদীস সমূহকে বিষয় বস্তু অনুসারে সাজানো হয়েছে এবং যার মধ্যে আকাইদ ছিয়ার তাফসির আহকাম, আদব, ফিতান, রিকাক ও মানাকিব এ আটটি অধ্যায় রয়েছে তাকে জামে বলা হয় যেমন জামে তিরমিযী
.
#সনদঃ হাদীস বর্ণনা কারীদের ধারাবাহিকতাকে সনদ বলে,
#মতনঃ হাদীসের মূল শব্দ সমূহকে মতন বলে।
#রেওয়ায়েতঃ হাদীস বর্ণনা করাকে রেওয়ায়েত বলে।
#দেরায়েতঃ হাদীসের মতন বা মূল বিষয়ে আভ্যান্তরীন সাক্ষ্য প্রমানের ভিত্তিতে যুক্তির কষ্টিপাথরে যে সমালোচনা করা হয় তাকে দেরায়েত বলে।
#রিজালঃ হাদীস বর্ণনাকারীর সমষ্টিকে রিজাল বলে।
#শায়খাইনঃ মুহাদ্দিসদের পরিভাষায় ইমান বুখারী (রহঃ) ও মুসলিম (রহঃ) কে শায়খাইন বলে।
#হাফিজঃ যে ব্যাক্তি সনদও মতনের সকল বৃত্তান্ত সহ এক লক্ষ হাদীস মুখস্ত জানেন তাকে হাফিজ বলে।
#হুজ্জাতঃ যে ব্যাক্তি সদন ও মতনের সকল বৃন্তান্ত সহ তিন লক্ষ্য হাদীস মুখস্ত জানেন তাকে হুজ্জাত বলে।
#হাকিমঃ যে ব্যাক্তি সনদ ও মতনের সকল বৃত্তান্ত সহ সকল হাদীস মুখস্থ করেছেন তাকে হাকিম বলে।
.
#সিহাহ্_সিত্তাঃ সিহাহ্ অর্থ বিশুদ্ব, সিত্তাহ অর্থ ছয়। সিহা সিত্তা এর আভিধানিক অর্থ হল ছয়টি বিশুদ্ব ইসলামী পরিভাষায় হাদীস শাসের ছয়টি নির্ভূল ও বিশুদ্ব হাদীস গ্রন্থকে এক কথায় সিহাহ্ সিত্তা বলা হয়।
.
সিহাহ্ সিত্তা হাদীস গ্রন্থ গুলো এবং সংকলকদের নামঃ
.
১। সহীহ বুখারী- ইমাম বুখারী (রহঃ)- হাদীস সংখ্যা ৭৩৯৭
২। সহীহ মুসলিম - ইমাম মুসলিম (রহঃ) হাদীস সংখ্যা- ৪০০০
৩। জামি তিরমিযী- ইমাম তিরমিযী (রহঃ) হাদীস সংখ্যা ৩৮১২
৪। সুনানে আবুদাউদ (রহঃ) ইমাম আবুদাউদ (রহঃ) হাদীস সংখ্যা ৪৮০০
৫। সুনানে নাসায়ী – ইমাম নাসাই (রহঃ) হাদীস সংখ্যা ৪৪৮২
৬। সুনানে ইবনে মাজাহ ইমাম ইবনে মাজাহ (রহঃ) হাদীস- ৪৩৩৮
.
হাদীসের শ্রেণী বিভাগ:
মুল বক্তব্য হিসেবে তিন প্রকার:
.
১। কাওলী
২। ফেলী
৩। তাকরীর
রাবীদের সংখ্যা হিসেবে তিন প্রকার:
১। খবরে মুতাওয়াতের
২। খবরে মাশহুর
৩। খবরে ওয়াহেদ
রাবীদের সিলসিলা হিসাবে তিন প্রকার :
১। মারফু
২। মাওকুফ
৩। মাকতু
রাবীদের পড়া হিসেবে দুই প্রকার:
১। মুক্তাসিল
২। মুনকাতে
বিশ্বস্ততা হিসেবে তিন প্রকার:
১। ছহীহ্
২। হাসান।
৩। জয়ীফ
.
বেশী হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীগণঃ
========================
১। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হাদীস সংখ্যা ৫৩৭৪টি মৃত্যু৫৭হিজরী বয়স: ৭৮বছর
২। হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) হাদীস সংখ্যা ২২১০টি মৃত্যু ৫৮ হিজরী বয়স: ৬৭বছর
৩। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) হাদীস সংখ্যা ১৬৬০ মৃত্যু ৫৮ হিজরী বয়স: ৭১বছর
৪। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হাদীস সংখ্যা ১৬৩০ মৃত্যু ৭০ হিজরী বয়স: ৮৪বছর
৫। হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) হাদীস সংখ্যা ১৫৪০ মৃত্যু ৭৪ হিজরী বয়স: ৯৪বছর
৬। হযরত আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) হাদীস সংখ্যা ১২৮৬ মৃত্যু ৯৩ হিজরী বয়স: ১০৩বছর
৭। হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হাদীস সংখ্যা ১১৭০ মৃত্যু ৪৬ হিজরী বয়স: ৮৪বছর
৮। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হাদীস সংখ্যা ৮৪৮ মৃত্যু ৩২ হিজরী বয়স:-
৯। হযরত আমর ইবনুল আস (রাঃ) হাদীস সংখ্যা ৭০০ মৃত্যু ৬৩ হিজরী
........................................................................................................................................................................
১# সাবধান! কখনো মিথ্যা সাক্ষ্য দেবে না।
আর সত্য সাক্ষ্যও গোপন করবে না।
(যে ব্যক্তি উহা গোপন করবে তার অন্তর পাপী। আর তোমাদের আমল সম্পর্কে আল্লাহ পরিজ্ঞাত।
(সূরা বাকারা-২৮৩)
.......................................................................................................................................................................
২# তোমরা আল্লাহ্র ইবাদত কর,
তার সাথে কাউকে শরীক করিওনা,
বাবা-মায়ের সাথে উত্তম আচরন কর,নিকটাত্মীয়,ইয়াতিম ও মিসকিনদের
প্রতিও এবং পড়শী আত্মীয়ের প্রতি,
পার্শ্ববর্তী পড়শীর প্রতি,পথ চলার সাথী ও পথিকদের প্রতি এবং তোমাদের অধীনস্থ ক্রীতদাস ও দাসীদের প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ প্রদর্শন কর।
----[সূরা নিসা ৩৬]
.......................................................................................................................................................................
৩# মহান আল্লাহ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) উদ্দেশ্য করে বলেন,
“তোমাকে কষ্ট দেয়ার জন্য
আমি তোমার প্রতি কোরআন নাযিল করিনি।
এ যারা ভয় করে শুধু তাদের উপদেশার্থে।”
(সুরা ত্ব-হা, আয়াতঃ ২-৩)
.......................................................................................................................................................................
৪# রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,
“তুমি তার সাথে সুসম্পর্ক জুড়ে চল যে তোমার সাথে তা নষ্ট করতে চায়, তার প্রতি সদ্ব্যবহার কর যে তোমার সাথে দুর্ব্যবহার করে এবং হক কথা বল; যদিও তা নিজের বিরুদ্ধে হয়।”
(ইবনে নাজ্জার, সহীহুল জামে ৩৭৬৯ নং)
.......................................................................................................................................................................
৫# নিশ্চয়ই নির্ধারিত সময়ে নামায আদায় করা মু'মিনদের উপর ফরজ।
______ [সূরা আন নিসা ১০৩]
অতএব দুর্ভোগ সেসব নামাযীর, যারা তাদের নামায সম্বন্ধে বে-খবর।
______ [সূরা আল মা'উন : ৪- ৫
.......................................................................................................................................................................
৬# বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) বলেন—
জুমা’আর দিনে এমন একটি সময় আছে
যখন বান্দা যাহা চায় আল্লাহ তাকে তাই দিয়ে থাকেন । সেই সময় টা হল —
আসর থেকে মাগরিব পর্যন্ত ।
—: সহিহ বূখারী — ৯৩৫
.......................................................................................................................................................................
৭# রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তিন প্রকার মানুষ রয়েছে যাদের চোখ জাহান্নাম দেখবে না, - যারা আল্লাহর রাস্তায় পাহারা দেয় - যারা আল্লাহর ভয়ে কাঁদে - যারা গায়ের-মাহরাম নারীকে দেখে চোখ নিচু করে।
আত-তারগীব, ৪৭১
.......................................................................................................................................................................
৮# রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, কোরআনে
৩০ আয়াত বিশিষ্ট এমন একটি সূরা আছে,
যা তার পাঠকারীর জন্য সুপারিশ করবে
এবং শেষাবধি তাকে ক্ষমা করে দেয়া হবে,
সেটা হচ্ছে ‘তাবা-রাকাল্লায
বিয়্যাদিহিল মূলক’
(সূরা মূলক)। —আবূ দাউদ ১৪০০
.......................................................................................................................................................................
৯# আল্লাহ বলেন,
তোমার মৃত্যু উপস্থিত হওয়া
পর্যন্ত তুমি তোমার রবের ইবাদত কর,,
সূরা হিযর,আয়াত ৯৯
No comments:
Post a Comment
Thanks For Comment........