বেতাগী অবস্থান ও আয়তন
বেতাগী উপজেলাটি বিষখালী নদীর তীরে অবস্থিত। এর আয়তন ১৬৭.৭৫ বর্গ কি.মি.। অবস্থান: ২২°১৩´ থেকে ২২°২৯´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°০৪´ থেকে ৯০°১৫´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। এর উত্তরে রাজাপুর, কাঁঠালিয়া ও বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলা, দক্ষিণে বরগুনা সদর উপজেলা, পূর্বে মির্জাগঞ্জ উপজেলা এবং পশ্চিমে কাঁঠালিয়া ও বামনা উপজেলা। এই উপজেলার প্রধান নদীগুলো হচ্ছেঃ বিষখালী নদী ও গজালিয়া নদী। এছাড়াও এখানকার উল্লেখযোগ্য জলাশয়ের মধ্যে রয়েছে কাটাখালি খাল ও করুণা খাল।
নামকরণের ইতিহাস
বেতাগী শব্দের নামকরণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন মত রয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশের মতে বেদাগী থেকে বেতাগী নামের সূত্রপাত হয়েছে বলে মনে করা হয়। অষ্টাদশ প্রথম দিকে ইংরেজ শাসকরা শত শত নিরীহ লোক ধরে এনে দক্ষিণ জনপদে লবন চাষ করাতে কৃষকদের উপর নানারকম জোর জবরদস্তি ও নির্যাতন চালাতো। এমনকি তাদেরকে তামাক সেবনেও অভ্যস্ত করতো বলে জানা যায়। এসময় তৎকালীন শাসনামলে বুজুর্গ উমেদপুরের প্রতাপশালী জমিদার ও কৃষক নেতা আইন উদ্দীন সিকদার এ অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন ও গড়ে তোলেন ও কৃষকদের সংগঠিত করে লবন চাষের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেন। এতে দাঙ্গা-হাঙ্গামায় অনেক ইংরেজও মারা যায়। ইংরেজরা আইন উদ্দিন সিকদারের বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করে ও তাকে কুখ্যাত ডাকাত হিসেবে আখ্যায়িত করে। ১৭৮৯ সালে তার জমিদারী কেড়ে নেয়া হয় এবং তাকে গ্রেফতার করে নির্বাসনে পাঠানো হয়। সে সময়ের ধর্মীয় নেতা নেয়ামত শাহের নিকট এলাকার জনসাধারন আইন উদ্দিন সিকদারের মুক্তির জন্য সাহায্য চাইলে তিনি তৎকালীন ঢাকাস্থ মোগল সুবেদার ইসলাম খার নিকট আইন উদ্দিন সিকদারের পক্ষে সুপারিশ করে একটি পত্র প্রেরণ করেন। এ চিঠিতে তাকে দাগী নয়, বেদাগী (অপরাধী নয়) বলে আখ্যায়িত করে। ফরাসী শব্দ বেদাগী থেকেই কালক্রমে বেতাগী শব্দের রুপান্তরিত হয়ে বেতাগীর উদ্ভব হয় বলে ধারনা করা হয়।এছাড়া বেতাগী অঞ্চলে আগে অনেক বেত পাওয়া যেত এবং বেতের আগা একটি জনপ্রিয় সবজি হিসাবে সকলের কাছে বেশ কদর ছিল। সেই "বেতাগা" এর সূত্র ধরে বেতাগীর উৎপত্তি হতে পারে। বেতাগীর নামকরণে আবার কেউ কেউ মনে করেন, ইংরেজদের কাউকে কোন কাজে বাধ্য না করাতে পারলে চরম বেত্রাঘাত করত। এখানের মানুষ প্রতিবাদী হওয়ার কারনে আরও বেশি বেত্রাঘাতের স্বীকার হত। এই বেত্রাঘাত শব্দানুসারে বেতাগী নামের সৃষ্টি হয়েছে।
প্রশাসন বেতাগী থানা গঠিত হয় ১৯২০ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে। ১৯৮৩ সালে বেতাগী উপজেলা উদ্বোধন করেন তৎকালীন পূর্তমন্ত্রী মেজর জেনারেল এম এ মুমীন।
প্রশাসনিক এলাকা
এই উপজেলার ইউনিয়ন ০৭ টি -- বিবিচিনি ইউনিয়ন
- বেতাগী ইউনিয়ন
- মোকামিয়া ইউনিয়ন
- হোসনাবাদ ইউনিয়ন
- বুড়ামজুমদার ইউনিয়ন
- কাজিরাবাদ ইউনিয়ন এবং
- সরিষামুড়ি ইউনিয়ন
জনসংখ্যার উপাত্ত
২০১১ সালের আদমশুমারী অনুসারে এই উপজেলার লোকসংখ্যা ১,১৯,৩৫৬ জন; যার মধ্যে পুরুষ ৬০,০৬৭ জন এবং মহিলা ৫৯,২৮৯ জন। এখানে মুসলিম ১,০৭,১১০ জন, হিন্দু ১১,৯৮৩ জন, বৌদ্ধ ২৩৬ জন এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বী ২৭ জন বসবাস করে।শিক্ষা
শিক্ষার হার ৫৯.৭২%; এর মধ্যে পুরুষ ৬২.৯% এবং মহিলা ৫৬.৫%। এখানকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা নিম্নরূপঃ- কলেজ - ৭টি (১টি সরকারি),
- মাধ্যমিক বিদ্যালয় - ২২টি,
- প্রাথমিক বিদ্যালয় - ১৪০টি,
- মাদ্রাসা - ৫৮টি।
স্বাস্থ্য
- বিদ্যুৎ ব্যবহারঃ
- পানীয়জলঃ
- স্যানিটেশন ব্যবস্থাঃ
- স্বাস্থ্যকেন্দ্রঃ
- উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র - ১টি,
- স্যাটেলাইট ক্লিনিক - ৭টি,
- ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র - ৭টি,
- পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র - ১টি।
অর্থনীতি
- শিল্প ও কলকারখানা - রাইসমিল, স’মিল, আইস ফ্যাক্টরি, স্টোরেজ ব্যাটারি ওয়ার্কসপ।
- কুটিরশিল্প - স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, দারুশিল্প, সূচিশিল্প, বাঁশ ও বেতের কাজ।
- হাটবাজার - ১৮টি।
- মেলা - ৩টি (কবিরাজবাড়ির মেলা, বৈশাখি মেলা ও বুড়া মজুমদার কাঁচারিবাড়ির মেলা)।
- প্রধান রপ্তানিদ্রব্য - ধান, চাল, খেসারি, কলা, চিংড়ি।