গৌরবময় বিজয়ের মাস - সুখী মানুষ

Breaking

Post Top Ad

Responsive Ads Here

Wednesday, 13 December 2017

গৌরবময় বিজয়ের মাস


বাঙালির জাতীয় জীবনের সবচেয়ে গৌরবময় মাস ডিসেম্বর। এ মাসেই বাঙালি পেয়েছিল তার বহু কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যা, পাক হানাদার বাহিনীর বর্বরতম হত্যাযজ্ঞ, নির্যাতন, নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়ে ৯ মাসের ত্যাগ তিতিক্ষার পর পৃথিবীর বুকে এ মাসেই রচিত হয়েছিল এক অমর গাথা– বাঙালির স্বাধীনতা, একটি মানচিত্র, একটি পতাকা। ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ নামক যে রাষ্ট্র বিজয় গৌরবে তার যাত্রা শুরু করেছিল, আজ তা বিশ্বের কাছে এক অপার বিস্ময়, উন্নয়নের রোল মডেল!
বাঙালির জাতীয়তাবোধের উন্মেষের সুদীর্ঘ ইতিহাসে শ্রেষ্ঠতম ঘটনা হলো ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ। সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামের এক ঐতিহাসিক ঘটনার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির কয়েক হাজার বছরের সামাজিক, রাজনৈতিক স্বপ্ন পূরণ হয় এই মাসে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে জনযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এ দেশের মানুষ। ৯ মাসের সশস্ত্র সংগ্রাম আর ত্রিশ লাখ শহীদ ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির মাধ্যমে আসে জাতীয় মুক্তি।
প্রতিবছরের মতো এবারও বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা ও নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পুরো মাসজুড়ে বিজয়ের সেই আনন্দ উদযাপন করবে বাংলাদেশ। লাল-সবুজের পতাকা উড়বে দেশের আনাচে-কানাচে। সরকারি-বেসরকারি স্থাপনার পাশাপাশি ব্যক্তিগত গাড়িতেও দেখা যাবে পতপত করে উড়ছে বিজয় নিশান- বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। ১৬ ডিসেম্বর সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রেষ্ঠ সন্তানদের বিনম্র শ্রদ্ধা জানাবে জাতি। তার আগে ১৪ ডিসেম্বর বেদনাভরে স্মরণ করবে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের। এবারের বিজয় দিবস উদযাপনে যোগ হয়েছে আরেকটি আনন্দের উপলক্ষ। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান) বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান জাতিকে স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত হওয়ার ডাক দিয়েছিলেন যে ভাষণে, সেটি গত অক্টোবরে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের দলিল হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করেছে।
বাঙালি জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন মুক্তিযুদ্ধের অবিস্মরণীয় গৌরবদীপ্ত চূড়ান্ত বিজয় এ মাসের ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয়। স্বাধীন জাতি হিসেবে সমগ্র বিশ্বে আত্মপরিচয় লাভ করে বাঙালিরা। অর্জন করে নিজস্ব ভূখণ্ড আর সবুজের বুকে লাল সূর্য খচিত নিজস্ব জাতীয় পতাকা। ভাষার ভিত্তিতে যে জাতীয়তাবাদ গড়ে উঠেছিল, এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে ঘোষিত স্বাধীনতা পূর্ণতা পায় এই দিনে।
বাঙালির হাজার বছরের স্বপ্নপূরণ হওয়ার পাশাপাশি বহু তরতাজা প্রাণ বিসর্জন আর মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন হওয়ায় বেদনাবিঁধূর এক শোকগাথার মাসও এই ডিসেম্বর। এ মাসেই স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি পাক হানাদার বাহিনীর এদেশীয় দোসর– রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের নৃশংস হত্যাযজ্ঞে মেতে ওঠে। একটি জাতিকে মেধাহীন করে দেওয়ার এ ধরনের ঘৃণ্য হত্যাযজ্ঞের কোনও নজির বিশ্বে নেই।
জাতি এ বছর বিজয়ের ৪৬তম বার্ষিকী পালন করবে। ইতোমধ্যেই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হয়েছে। চলছে আরও অনেক ‍যুদ্ধাপরাধীর বিচারকাজ।
মাসব্যাপী উৎসাহ-উদ্দীপনায় এবং নানা কর্মসূচির মাধ্যমে স্বাধীনতার পক্ষের মানুষ পালন করবে বিজয়ের মাসটি। প্রতিদিনই নানা কর্মসূচির মাধ্যমে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার মাধ্যমে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য আত্মোৎসর্গকারী শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণ করবে এবং তাদের মাগফেরাত কামনা করবে। ঘৃণা-ধিক্কার জানাবে স্বাধীনতার শত্রু এদেশীয় রাজাকার, আলবদর ও মানবতারশত্রু যুদ্ধাপরাধীদের।

1 comment:

Thanks For Comment........

Post Bottom Ad

Responsive Ads Here

Pages